
শাহীন সুলতানা , কুলিয়ারচর (কিশোরগঞ্জ):
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে অবৈধভাবে সরকারি জায়গা থেকে দুই লক্ষ টাকা মূল্যের তিনটি গাছ কাটার অভিযোগে কুলিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছে এলাকাবাসী।
১৭ নভেম্বর সোমবার দুপুরে সালুয়া ইউনিয়নের বাজরা গ্রামের বাসিন্দা কিশোরগঞ্জ জেলা শ্রমিক দলের সহ-সভাপতি ও কুলিয়ারচর উপজেলা শ্রমিক দলের আহবায়ক মো. সারফ উদ্দিন সুপন (৫২), সালুয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আতিকুল ইসলাম (৩৫), সালুয়া ইউনিয়ন ছাত্র দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. কারিমুল হাসান, শরিফুল ইসলাম ও খোকা মিয়া যৌথ ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
অভিযোগলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, কিশোরগঞ্জ জেলাধীন কুলিয়ারচর উপজেলার ৬নং সালুয়া ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বাজরা মাছিমপুর খেলার মাঠের পাশদিয়ে যাওয়া পুরনো সরকারি রেকর্ডভুক্ত রাস্তায় রোপিত শতবর্ষী ১টি রেন্টি গাছ, ১টি আম গাছ, ১টি জাম গাছ কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া রাস্তা সংস্কারের নামে মাছিমপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম লিটন, নুরুল মনছুর টেনাম ও তানভীর আহম্মেদ গংরা গাছগুলো বিক্রি করে দেয়। তিনটি গাছের আনুমানিক মূল্য দুই লক্ষ টাকা হবে। গাছ বিক্রির পর গাছ ক্রয়কারী উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে গাছ ব্যবসায়ী মো. ফুল মিয়া (৪৫) গত ১৬ নভেম্বর রোববার গাছগুলো কেটে নেওয়ার সময় সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গাছ কাটতে ও নিয়ে যেতে বাধা দেয়।
এব্যাপারে উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে গাছ ব্যবসায়ী মো. ফুল মিয়া (৪৫) বলেন, আমি মাছিমপুর গ্রামের তানভীর আহম্মেদ, সিরাজুল ইসলাম, নুরুল মনছুর টেনাম সহ কয়েকজনের নিকট থেকে ১লক্ষ ১৮ হাজার টাকা দিয়ে তিনটি গাছ ক্রয় করে একটি গাছ কাটার পর আরেকটি গাছ অর্ধেক কাটার সময় পুলিশ বাঁধা দেয়। এর পর আর গাছ কাটতে যাইনি।
এরপর সোমবার বিকালে অভিযোগের তদন্তে ঘটনাস্থলে আসেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মেফতাহুল হাসান। তিনি তদন্ত শেষে কাটা গাছ ও গাছের ডালপালা স্থানীয় চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কাইয়ুম এর জিম্মায় রেখে আসেন এবং পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কাটা গাছ ও ডাল পালা যাতে কেউ নিতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে নির্দেশ দেন।
এব্যাপারে মাছিমপুর গ্রামের মো. সাইফুল ইসলাম লিটন (৫০) গাছ বিক্রি করার কথা স্বীকার করে বলেন, আমাদের গ্রামবাসীর যাতায়াতের পূর্বের রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়ায়, নিরুপায় হয়ে বাজরা মাছিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তাটি ব্যবহারে উপযোগী করতে ও সরকারি ভাবে রাস্তা সংস্কারের জন্য একটি প্রজেক্ট পেতে রাস্তটি দৃশ্যমান করার প্রয়োজন হয়। সরকারি রেকর্ডভূক্ত ওই রাস্তা নির্মানের জন্য এলাকার মুরুব্বিদের সাথে পরামর্শ করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যকে অবগত করে রাস্তার উপর থাকা একটি জাম গাছ ও ঈদগাহের সীমানায় থাকা একটি রেন্ট্রি গাছ ও একটি আম গাছ ১লাখ ১৮ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে বিক্রি করি। গত রোববার গাছ তিনটি কেটে নেওয়ার সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) স্যারের নির্দেশে কুলিয়ারচর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গাছ তিনটি কেটে নিতে বাধা দিলে আমরা সরকারি নির্ধেশনা মেনে নিয়ে গাছ কাটা ও নেওয়া বন্ধ রাখি। তিনি সরকারি নিয়ম অমান্য করে ও অনুমতি ব্যতিত গাছ তিনটি বিক্রি ও কাটার জন্য অনুতপ্ত হয়ে ভুল স্বীকার করেন এবং প্রশাসন এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিবেন তা তিনি মেনে নিবেন বলে জানিয়ে তাদের চলাচলের জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান।
নিজেকে বাজরা মাছিমপুর ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি দাবী করে মাছিমপুর গ্রামের তানভীর আহম্মেদ (৪০) সাইফুল ইসলাম লিটনের বক্তব্যের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে বলেন, এলাকার মরুব্বিদের সাথে পরামর্শ করে ১লাখ ১৮ হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণ করে এক গাছ ব্যবসায়ীর নিকট গাছ তিনটি বিক্রি করেছি। প্রশাসনের নির্দেশে গাছ কাটা ও নেওয়া বন্ধ রেখেছি।তিনিও সরকারি নিয়ম অমান্য করে ও অনুমতি ব্যতিত গাছ তিনটি বিক্রি ও কাটার জন্য অনুতপ্ত হয়ে ভুল স্বীকার করেন এবং প্রশাসন এ বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নিবেন তা তিনি মেনে নিবেন বলে জানিয়ে তাদের চলাচলের জন্য রাস্তাটি নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানান।
এব্যাপারে মো. সিরাজুল ইসলামের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি কোন বক্তব্য দিতে না চাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি।
এব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন পিপিএম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহোদয়ের নির্দেশে রোববার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ কাটতে ও নিতে বাঁধা দিয়ে আসেন। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইয়াসিন খন্দকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগ পাওয়া সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, নিয়ম বহির্ভূত সরকারি সম্পত্তি থেকে গাছ কেটে থাকলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।