জামালপুর প্রতিনিধিঃ
২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা আওয়ামী লীগের দোসররা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দুর্নীতি, অনিয়ম ও রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের অভিযোগে ঘেরা জামালপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) কার্যালয়ের সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরীক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান (আসাদ) এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
সরকারি চাকরিতে যোগদানের পর থেকে টানা ১৩ বছর ধরে একই জেলায় কর্মরত থেকে তিনি গড়ে তুলেছেন প্রভাব-প্রতিপত্তির এক অঘোষিত ভাগবাটোয়ারা সিন্ডিকেট।
জানা গেছে, আসাদ ২০১২ সালে আওয়ামী লীগ মনোনীত ময়মনসিংহ-৩ (মুক্তাগাছা) আসনের সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মান্নানের সরাসরি সুপারিশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের আওতাধীন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ে নিয়োগ পান। এরপর থেকে প্রশাসনের তদারকি এড়িয়ে তিনি জামালপুর জেলাতেই অবস্থান করছেন যা সরকারি চাকরির বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত থাকার পরিচয় ব্যবহার করে আসাদ জামালপুরের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে গড়ে তোলেন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সেই সূত্রে সরকারি ত্রাণ, প্রকল্প বাস্তবায়ন, ও উপকারভোগী তালিকা প্রণয়নে ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমে ব্যাপক অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
সম্প্রতি সৌদি সরকারের পাঠানো কোরবানির দুম্বার মাংস বিতরণে ভুয়া মাদরাসার নাম ব্যবহার, ভূয়া তালিকা তৈরি ও আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, ওই মাংস রাতের আঁধারে আওয়ামী লীগ নেতাসহ নিজের মনোনীত ব্যক্তিদের মধ্যে ভাগ করে দেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসাদ জামালপুরে যোগদানের পর থেকেই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকি বিল্লাহ ও সহ-সভাপতি ছানা মিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে তিনি জেলার বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োগ, ত্রাণ বিতরণ ও উপকারভোগী তালিকা প্রণয়নে প্রভাব বিস্তার করেন। তার অধীনে একটি ভাগবাটোয়ারা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, যেখানে সরকারি বরাদ্দের একটি অংশ নিয়মিতভাবে ভাগ হয়ে যায় প্রভাবশালীদের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, জামালপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে কোনো কাজে গেলে আসাদের শরণাপন্ন না হলে ঝামেলায় পড়তে হয়। গোপনে দেখা করলে কাজ সহজেই হয়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, আসাদ তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নানা কৌশলে ম্যানেজ রেখেই চালাচ্ছেন নিজের অঘোষিত সিন্ডিকেট।
এ বিষয়ে আসাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন,দীর্ঘদিন একই জেলায় চাকরি করা নিয়মবহির্ভূত। অভিযোগ যাচাইয়ের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, প্রশাসনের চোখের আড়ালে থেকে প্রভাব ব্যবহার করে আসাদ জনসেবার বদলে নিজের প্রভাবই বাড়িয়েছেন। এখন সময় এসেছে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের।